বাংলাদেশের জরুরি ফোন নম্বর
দুর্ঘটনা বা অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিতে পড়লে অনেক সময় আমরা হতভম্ব হয়ে যাই। মনে হয় মাথা যেন কাজ করছে না, কী করব ভেবে পাই না। এইসময় ধৈর্য ধরে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আজকের দিনে প্রায় সবার কাছেই মোবাইল ফোন থাকে। তাই দ্রুত সহায়তা পেতে জরুরী কিছু নম্বরে ফোন করা যায়। এই নম্বরগুলোতে 24/7 সহায়তা পাওয়া যায়।
জাতীয় জরুরি সেবা (৯৯৯)
জরুরী পরিস্থিতিতে দ্রুত সাহায্য পেতে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯ মনে রাখুন। এটি বাংলাদেশের যেকোনো স্থান থেকে যেকোনো দুর্ঘটনার সময় সহায়তা পেতে ব্যবহার করা যেতে পারে।
এই নম্বরে ফোন করে আপনি পেতে পারেন:
- পুলিশ
- ফায়ার সার্ভিস
- অ্যাম্বুলেন্স
- এই বিষয়গুলি সম্পর্কে তথ্য
কল সেন্টারটি:
- পুলিশের অধীনে পরিচালিত
- দিনরাত ২৪ ঘণ্টা চালু
- যেকোনো ফোন থেকে বিনামূল্যে কল করা যায়
ফোন করার সময় মনে রাখবেন:
- আপনার অবস্থান এবং সমস্যার ধরণ স্পষ্টভাবে জানান।
- শান্ত থাকুন এবং অপারেটরের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন।
- মিথ্যা তথ্য দেবেন না, কারণ এর ফলে আপনাকে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সম্মুখীন হতে হতে পারে।
- যদি আপনি কোন জরুরী পরিস্থিতিতে না থাকেন তবে জরুরী সেবা নম্বরগুলোতে অপ্রয়োজনীয় ফোন করা থেকে বিরত থাকুন।
জরুরী পরিস্থিতিতে ধৈর্য ধরে কাজ করলে অনেক ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো সম্ভব। মনে রাখবেন, আপনি একা নন। সাহায্যের জন্য আপনার হাতের কাছেই 999 নম্বর রয়েছে।
স্বাস্থ্য বাতায়ন (১৬২৬৩): আপনার স্বাস্থ্যসেবার বিশ্বস্ত সঙ্গী
যখনই আপনার স্বাস্থ্যের বিষয়ে কোন প্রশ্ন বা সমস্যা থাকবে, স্বাস্থ্য বাতায়নের হেল্পলাইন ১৬২৬৩ নম্বরে ফোন করুন। এটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় পরিচালিত একটি ২৪ ঘণ্টা চালু হেল্পলাইন।
এই নম্বরে ফোন করে আপনি পাবেন:
- সরাসরি চিকিৎসকের পরামর্শ যেকোনো স্বাস্থ্য বিষয়ে
- সরকারি হাসপাতাল, ডাক্তার এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর তথ্য
- স্বাস্থ্যসেবা সংক্রান্ত অভিযোগ বা পরামর্শ জানানোর সুযোগ
- সরকারি ও বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে তথ্য
কল করার সময় মনে রাখবেন:
- প্রতি মিনিটে ২.৩৭ টাকা চার্জ (ভ্যাটসহ) প্রযোজ্য।
- কলম ও কাগজ হাতে নিয়ে ফোন করা ভালো।
- চিকিৎসকের নির্দেশাবলী সাবধানে লিখে নিন।
- গুরুতর অসুস্থতার ক্ষেত্রে দ্রুত একজন ডাক্তারের সাথে দেখা করুন।
এছাড়াও, স্বাস্থ্য বাতায়নের ওয়েবসাইট ব্যবহার করে আপনি:
- অনলাইনে স্বাস্থ্যসেবা পেতে পারেন।
- প্রয়োজনীয় তথ্য পেতে পারেন।
- আপনার অভিযোগ জানাতে পারেন।
ওয়েবসাইট: http://16263.dghs.gov.bd/
নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ সেল (১০৯ বা ১০৯২১)
আমাদের দেশে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটে প্রতিনিয়ত। এই নির্যাতন প্রতিরোধে ‘নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ সেল’ চালু করা হয়েছে, যার নম্বর ১০৯২১। কোনো নারী নির্যাতনের শিকার হলে, বখাটেদের আক্রমণের মুখে পড়লে অথবা অপমানিত হওয়ার আশঙ্কা করলে সঙ্গে সঙ্গে এই নম্বরে ফোন করে সাহায্য চাইতে পারেন। মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে নারী নির্যাতন প্রতিরোধকল্পে মাল্টিসেক্টরাল কর্মসূচির আওতায় এই কর্মসূচি পরিচালিত হচ্ছে। এ নম্বরে ফোন করতে কোনো চার্জ দিতে হবে না। সপ্তাহের সাত দিন ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে এই নম্বর।
চাইল্ড হেল্প লাইন (১০৯৮)
সুবিধাবঞ্চিত নির্যাতিত ও বিপদাপন্ন শিশুদের ২৪ ঘণ্টা জরুরি সহায়তা সেবা দিতে ২০১১ সালে যাত্রা শুরু করে চাইল্ড হেল্পলাইন ১০৯৮। সমাজসেবা অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধান অপরাজেয় বাংলাদেশ নামের একটি বেসরকারি সংস্থা এই হেল্পলাইন পরিচালনা করছে। এই নম্বরে ফোন করতে কোনো চার্জ প্রযোজ্য হবে না।
সরকারি আইন সেবা (১৬৪৩০)
অনেক সময় দুস্থ ও দরিদ্র মানুষ টাকার অভাবে আইনি পরামর্শ বা সহায়তা পান না। ফলে কেউ কেউ ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হন। তাঁদের কথা ভেবেই বিনা মূল্যে আইনি পরামর্শ ও আইনগত সহায়তা দিতে ১৬৪৩০ নম্বর চালু করা হয়। ২০১৬ সাল থেকে আইন ও বিচার বিভাগের অধীনে জাতীয় আইনগত সহায়তা সংস্থা এই সেবা দিয়ে আসছে। যেকোনো মোবাইল অপারেটর ও টিঅ্যান্ডটি নম্বর থেকে এই নম্বরে বিনা মূল্যে ফোন করা যাবে।
জাতীয় পরিচয়পত্র (১০৫)
এখন জাতীয় পরিচয়পত্র অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেক সময় এই পরিচয়পত্র হারিয়ে যায়, নষ্ট হয়ে যায়। আবার দেখা যায় যে, প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর জাতীয় পরিচয়পত্র নতুন করে করতে হয়। সে ক্ষেত্রে ভুল ভ্রান্তি হলে সংশোধন করতে হয়। কখনো কখনো হালনাগাদ করার প্রয়োজন হয়। এসব বিষয়ে জানতে বা জাতীয় পরিচয়পত্র বিষয়ে যেকোনো তথ্যের জন্য ১০৫ নম্বরে ফোন করা যাবে। নির্বাচন কমিশন এই হেল্পডেস্ক চালু করেছে ২০১৫ সালে। দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে যে কেউ ১০৫ নম্বরে ফোন করে জাতীয় পরিচয়পত্র–সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্য জানতে পারবেন।
বিটিআরসি (১০০)
ফোন ছাড়া এখন চলেই না। দেশে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান ফোন সেবা দিয়ে আসছে। গ্রাহক সেবা দিতে এসব প্রতিষ্ঠানের কাস্টমার কেয়ার রয়েছে। সংশ্লিষ্ট গ্রাহকেরা কাস্টমার কেয়ারে ফোন দিয়ে সেবা সম্পর্কে তথ্য ও অভিযোগ জানাতে পারেন। তবে গ্রাহকদের অভিযোগ গ্রহণ প্রক্রিয়া আরও শক্তিশালী করতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) কল সেন্টার (১০০) চালু করে। বিনা খরচে ফোন করে যে কেউ অভিযোগ জানাতে পারবেন এই নম্বরে।
বাংলাদেশ ব্যাংক (১৬২৩৬)
ব্যাংকিং সেবা পেতে হয়রানির শিকার হলে বা কোনো অভিযোগ থাকলে তা সরাসরি বাংলাদেশ ব্যাংকে জানানো যাবে ১৬২৬৩ নম্বরে। এটি বাংলাদেশ ব্যাংকের হেল্পলাইন। কোনো গ্রাহক কোনো ব্যাংকে গিয়ে হয়রানির শিকার হলে বা কোনো ব্যাংকের কর্মকর্তা গ্রাহককে যথাযথ সেবা না দিলে এই নম্বরে অভিযোগ দিতে পারেন। যেকোনো মোবাইল অপারেটর থেকে এই নম্বরে ফোন করা যাবে। এ জন্য স্বাভাবিক কল রেট প্রযোজ্য হবে।
পাশাপাশি bb. cipc@bb. org. bd ঠিকানায় ই-মেইলের মাধ্যমেও অভিযোগ জানানো যাবে।
দুদক (১০৬)
চোখের সামনে কোনো দুর্নীতি ও অনিয়ম হচ্ছে—কিন্তু কিছু করতে পারছেন না। কিংবা আপনি নিজেই সেই অনিয়মের শিকার হচ্ছেন। এমন দুর্নীতি ও অনিয়মের তথ্য জানাতে হটলাইন ১০৬ চালু করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। টেলিফোন বা যেকোনো মোবাইল ফোন থেকে কল করা যাবে এই নম্বরে। যে কেউ বিনা মূল্যে এই নম্বরে কল করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে অভিযোগকারীর নাম ও পরিচয় গোপন রাখা হয়। অভিযোগকারী চাইলে তাঁর বক্তব্য রেকর্ড করা যাবে। অফিস চলাকালে, অর্থাৎ সকাল নয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত কল করা যাবে এই নম্বরে।
ইউনিয়ন পরিষদ হেল্প লাইন (১৬২৫৬)
ইউনিয়ন পরিষদ পর্যায়ে যেকোনো ভাতা বা অনুদানসংক্রান্ত তথ্য ও পরামর্শ সেবা দিতে ২০১২ সালে যাত্রা শুরু করে ইউনিয়ন পরিষদ হেল্পলাইন ১৬২৫৬। যে–কেউ দেশের যেকোনো স্থান থেকে ফোন করে এই সেবা নিতে পারবেন। যেকোনো মোবাইল অপারেটর থেকে এই নম্বরে ফোন করা যাবে। এ জন্য স্বাভাবিক কল রেট প্রযোজ্য হবে।
এ ছাড়া আরও কিছু নম্বর আছে যেগুলো থেকে নানা সহায়তা পাওয়া যায়। যেমন: কৃষি কল সেন্টার (১৬১২৩), বিটিসিএল (১৬৪০২), দুর্যোগের আগাম বার্তা (১০৯৪১), প্রবাস বন্ধু কলসেন্টার (০৯৬৫৪৩৩৩৩৩৩), ঢাকা ওয়াসা (১৬১৬২)।