American DV Lottery apply-ডিভি লটারি আবেদন ২০২৪
ডিভি লটারি আবেদন ২০২৪: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী হতে কে না চান? আর কেমন হয় যদি পেয়ে যান আমেরিকার গ্রিন কার্ড? ৩য় বিশ্বের বহু মানুষের কাছে স্বপ্নের দেশ আমেরিকা। আধুনিক ও স্বচ্ছল জীবন যাপনের উদ্দেশ্য সারা বিশ্ব থেকে অভিবাসীরা পাড়ি জমায় এই দেশে। আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী আবাস কার্ড পাওয়ার সবচেয়ে সহজ ও বহুল প্রচলিত মাধ্যম হল ডিভি লটারি (DV Lottery)। আর ডিভি লটারি ২০২৪ আবেদন সম্পর্কেই আমাদের আজকের আলোচনা।
২০২৪ সালের ডাইভারসিটি ভিসা (ডিভি) লটারির জন্য আবেদন গ্রহণ শুরু করবে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর। আবেদন চলবে ০৫ অক্টোবর থেকে ০৮ নভেম্বর পর্যন্ত। তবে বাংলাদেশিদের জন্য ২০১৩ সাল থেকে ডিভি লটারির আবেদন বন্ধ রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়াও যেসকল দেশের কোঠা শেষ হয়েছে সেগুলো নিয়ে নিচে আলোচনা করা হলো।
ডিভি লটারি আবেদন American DV Lottery apply
গোটা পৃথিবীর উন্নত সব দেশগুলোর অন্যতম হল আমেরিকা। মানুষের সমস্ত মৌলিক চাহিদা পুরণের জন্য সেখানে আছে সবচেয়ে উন্নত ব্যবস্থা। সেখানে জীবন যাত্রার মান, কর্মসংস্থান, ও অবকাঠামো একে পুরো বিশ্বের মধ্যে অন্য মর্যাদায় নিয়ে গিয়েছে।
ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বিশ্বের কোটি কোটি আমেরিকায় স্থায়ী বসবাসের স্বপ্ন দেখে। আমেরিকার সরকারও চান পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ এখানে এসে বসবাস করুক এবং আমেরিকা কে কয়েক গুন এগিয়ে নিয়ে যাক। তাই আমেরিকান পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় কর্তৃক বিভিন্ন ভিসার ব্যবস্থা করে থাকে। ডিভি বা ডাইভারসিটি ভিসা তার মধ্যে একটি।
এই লেখায় আজ ডিভি লটারি ২০২৪ আবেদন, এর ইতিহাস এবং বাংলাদেশ থেকে এতে অংশ নেয়ার ব্যপারে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
ডিভি লটারি কি
ডাইভার্সিটি এর সংক্ষিপ্ত রূপই হচ্ছে ডিভি। স্বপ্নের দেশ আমেরিকায় বৈধ পন্থায় যাওয়া এবং বসবাসের জন্য আমেরিকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ডিভি লটারি ভিসা চালু করেছে। এই ডিভি লটারি ভিসার মাধ্যমে বিশ্বের যেকোন দেশের জনগণ আমরিকায় স্থায়ীভাবে নাগরিক কিংবা বসবাসের সুযোগ পেয়ে থাকেন।
বৈধভাবে যারা আমেরিকা যেতে চান তাদের জন্য আমেরিকান পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় কর্তৃক ১৮৫ রকম ভিসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ডিভি লটারি এগুলোর মধ্যে একটি, যা মানুষের কাছে অনেক বেশি সমাদৃত ও জনপ্রিয়। ডিভি ভিসার মাধ্যমে আমেরিকা প্রতি বছরে বিভিন্ন দেশে থেকে ৫৫০০০ এর মত লোককে লটারীর মাধ্যমে আমেরিকায় স্থায়ী নাগরিক হবার সুযোগ দেয়। মূলত, পৃথিবীর সব দেশের মানুষকে আমেরিকা থাকার সুযোগ করে দেয়ার জন্য ই আমেরিকান সরকার এই ভিসা চালু করে। তবে যেসব দেশের অভিবাসি আমেরিকাতে তুলনামূলক কম, শুধু সেই দেশগুলো থেকে ডিভি লটারির এপ্লাই করা যায়। ডিভি ভিসার আবেদনের জন্য কোনো ফি প্রদান করতে হয় না। শুধু লটারতে বিজয়ীদের জন্য ভিসা নেয়ার সময়ে নির্ধারীত একটি ফি জমা দিতে হয়।
ডিভি লটারি কেন চালু করা হয়ঃ
আমেরিকা বলতে গেলে অভিবাসীদের দেশ। আর এখানে আছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ। এই ডিভি লটারি প্রোগ্রামের মূল লক্ষ্য হল, আমেরিকার সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য বৃদ্ধি করা। আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভাবমূর্তি পুরো বিশ্বের দরবারে বজায় রাখা। পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ উচ্চাভিলাষী এবং দক্ষ লোককে স্থায়ী নাগরিক হতে আহ্বান করা।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি রোনাল্ড রেগান, ১৯৮৭ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে বসবাস করা প্রায় দুই মিলিয়ন মেক্সিকান বাসীকে ক্ষমা ও স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে কার্ডের জন্য বিল পাস করেন। কারণ তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জাতিগত বৈচিত্র্য বিনষ্ট হওয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন। এজন্য গ্রিন কার্ড লটারি ব্যবস্থার মাধ্যমে দেশের জাতীগত বৈচিত্র্য কে আবারও পুনরুদ্ধার এবং সংরক্ষণের চেষ্টা চালান। এই লটারিতে অংশগ্রহণকারীদের জন্য অভিবাসন প্রক্রিয়া বেশ সহজ করা হয়েছিল। ফলে প্রায় প্রত্যেকেই যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসনের সুযোগ পায়।
ডিভি লটারি কখন চালু হয়
১৯৮৭ সালে “এনপি-৫ লটারি প্রোগ্রাম” নামে সর্বপ্রথম ডিভি লটারি চালু হয়েছিলো। প্রথম দু’বছরেই মোট ৩৬টি দেশ থেকে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৫০০০ জন এ ভিসা প্রাপ্ত হয়। এরপর ডিভি লটারির ভিসার সংখ্যা ৫০০০ থেকে ১৫০০০ এ বর্ধিত করা হয়।
আরো পড়ুন: ভারতীয় ভিসা আবেদনের নিয়ম
১৯৯০-১৯৯১ সালে এ লটারির নাম পরিবর্তন করা হয়, তখন নাম দেওয়া হয় “ওপি-১ প্রোগ্রাম”। এ নামে ১০০০০ ভিসা দেওয়া হয়েছিল। দুই বছর ডিভি পরবর্তীতে আবার “এএ-১ প্রোগ্রাম” নাম দেওয়া হয় এই লটারির। তখন ৩৭টি দেশ থেকে মোট ৪০০০০ হাজার জনকে এ ভিসা প্রদান করা হয়। সর্বশেষ ১৯৯৪ সালে বর্তমান নাম রাখা হয় অর্থাৎ ডিভি লটারি।
গ্রীন কার্ড বা সবুজ কার্ড কি?
ইউএস সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসেস (ইউএসসিআইএস) এর পক্ষ থেকে ইস্যু করা হয় গ্রীন কার্ড। এটি আপনাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী ভাবে বসবাস এবং কাজ করার সূযোগ করে দেয়। শরণার্থী, আশাইলি পরিবার, কর্মসংস্থান কিংবা স্থিতির জন্য সবুজ কার্ড পাবার বেশ কিছু উপায় রয়েছে। কারণ প্রত্যেকেই তো আর যোগ্যতা অর্জন করে না। কিন্তু এর মধ্যে ডাইভারসিটি ইমিগ্রান্ট ভিসা (DV) প্রোগ্রামটি সবচেয়ে প্রসিদ্ধ মাধ্যম।
ডিভি লটারি ২০২৪ আবেদন: American DV Lottery apply
আপনি যদি একটি যোগ্য দেশের নাগরিক হন এবং সকল প্রকার নিয়মাবলির আওতায় থাকেন তাহলে আপনি অবশ্যই ডিভি লাটারির জন্য আবেদন করতে পারবেন। ডিভি লটারীর জন্য আবেদন করতে হবে অনলাইনে। আবেদন করতে হবে তাদের ওয়োবসাইটের ঠিকানায়।
ডিভি আবেদনের দিকনির্দেশিনা ইংরেজি সহ বিভিন্ন ভাষায় দেয়া থাকে। তার মধ্যে বাংলাও আছে। এইখানে একটি বিষয় লক্ষ রাখতে হবে। ডিভি লটারির জন্য আবেদন কার্য শুরুর দিকে সেরে ফেলাই সবচেয়ে ভাল ভালো।কারণ শেষের দিকে আবেদনকারীদের সংখ্যা বেশি থাকায় চাপ ও বেশি পরে। ফলে নানা ধরনের কারীগরি ত্রুটি হয়ে যেতে পারে। চলুন জেনে নেই-
ডিভি লটারি আবেদন করার নিয়ম
ডিভি লটারির জন্য আবেদন করতে তাদের ওয়েবসাইটে যেতে হবে।। এবং নির্ধারিত আবেদনের ফর্মটিতে লিম্নলিখিত জিনিসগুলো খুবই সতর্কতার সাথে পূরন করতে হবে। কোনো রকম ভুল কিংবা মিথ্যা তথ্য দেয়া যাবে না।
আমেরিকা ডিবি লটারি ২০২৪ আবেদন ফরম –
১। আবেদনকারীর সম্পূর্ণ নাম
২। জন্মের ডেট
৩। আবেদনকারীর জন্মের স্থান ( আবেদন কারী যেই শহরে বা জেলায় জন্ম নিয়েছিলেন অথবা যেখান থেকে জন্মনিবন্ধন কার্ড তৈরি করেছিলেন)
৪। জাতীয়তা/ দেশ
৫। আবেদনকারীর সাম্প্রতিক ছবি
৬। বর্তমান ঠিকানা/ পুর্ণঠিকানা
৭। বর্তমানে যে দেশের বাসিন্দা
৮। ফোন নাম্বার/ মোবাইল নম্বর
৯। ই-মেইল ঠিকানা ( যদি থাকে)
১০। প্রার্থীর সর্বোচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যাতা ও প্রতিষ্ঠান
১১। বিবাহিত / অবিবাহিত /
১২। সন্তান- সন্ততির সংখ্যা ( যদি তার সন্তানের বয়স ২১ বছরের নিচে হয় )
১৩। স্বামী অথবা স্ত্রী র তথ্য
১৪। সন্তান সন্ততিদের তথ্য
সতর্কতা-
একজন প্রার্থী কখনই একটির বেশি আবেদন করার চেষ্টা করবেন না। কিন্তু স্বামী-স্ত্রী আলাদা আলাদা দুইটি আবেদন করতে পারবেন। আবেদন প্রক্রিয়া যদি সফল্ভাবে সম্পন্ন হয় তবে একটি “কনফার্মেশন নাম্বার” আসবে। এখানে আবেদনকারীর পুরো নাম এবং জন্মসাল দেখানো হবে। ডিভির লটারির পরবর্তি ধাপ গুলোর জন্য এই তথ্যগুলো খুবই জরুরী। এর পরে অনলাইনে ভিসা পাবার সময় বা স্ট্যাটাস জানতে এই তথ্য গুলো অবশ্যই দরকার হবে।তাই এগুলো সযত্নে সংরক্ষণ করবেন।
বাংলাদেশ ডিবি লটারি ২০২৪ আবেদন
দূর্ভাগ্যবশত, ২০১২ সালের পর থেকেই বাংলাদেশ আর আমেরিকান ডিভি লটারির জন্য কোয়ালিফাই করতে পারছেন না। অতীতের রেকর্ড অনুযায়ী বাংলাদেশ থেকে পঞ্চাশ হাজারেরও বেশি লোক এখন পর্যন্ত ইউএসএ ডিভি লটারির সাহায্যে স্থায়ী হয়েছেন । আর অধিক সংখ্যায় অভিবাসী হওয়ার কারনে বাংলাদেশ থেকে আপাতত ডিভি লটারিতে লোক নেয়া হচ্ছে না।
বাংলাদেশ সহ কোন কোন দেশ ডিভি ভিসা পাবে নাঃ
যে দেশ সমুহ থেকে অনেক বেশি অভিবাসী আমেরিকাতে বসবাস রত রয়েছে সেই সব দেশগুলো কে গ্রিন কার্ড লটারি প্রোগ্রাম থেকে বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ১৯৯৪ সালে এই নতুন আইনটি করা হয়। এর পেছনে কারন হল, এক ই দেশের বিপুল পরিমাণ মানুষ আমেরিকাতে একসাথে থাকলে তারা এক সময়ে একত্রিত হয়ে, আমেরিকার রাষ্ট্র বা সরকারের বিরোধীতা করে কোন কাজ কিংবা স্ট্রাইক / প্রটেস্ট শুরু করতে পারে। যার ফলে আমেরিকার সার্বিক ক্ষতিসাধন হতে পারে। এই জন্য প্রতিটি দেশ থেকে ৫০০০০ গ্রিন কার্ডের মত কোঠা চালু করা হয়েছে। যেইসকল দেশ গুলির ভিসা কোঠার লিমিট পার হয়ে গিয়েছে তাদেরকে বাদ দেয়া হয়েছে। এবং অন্য সকল দেশের মানুষের জন্য প্রতি বছর প্রায় ৫৫০০০ ভিসা দেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ সহ কোঠা শেষ হয়ে যাওয়ার ফলে যে সকল দেশগুলো ডিভি ভিসা লটারির জন্য আবেদন করতে পারছে না সেগুলো হচ্ছে-
১.বাংলাদেশ,
২. চীন (হংকং এসএআর সহ),
৩. কানাডা,
৪. হন্ডুরাস
৫. কলম্বিয়া,
৬. ব্রাজিল
৭. এল সালভাদোর,
৮. জামাইকা
৯. হাইতি,
১০. গুয়াতেমালা
১১. ভারত,
১২.,নাইজেরিয়া
১৩. মেক্সিকো,
১৪. ফিলিপাইন
১৫. পাকিস্তান,
১৬. যুক্তরাজ্য (উত্তর আয়ারল্যান্ড বাদে) এবং
১৭. দক্ষিণ কোরিয়া,
১৮. ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্র
১৯. ভিয়েতনাম।
এক আমেরিকায় গেলেই পৃথিবীর সব দেশের মানুষদের দেখা যাবে। বলতে গেলে জাতিগত বৈচিত্র্যতার এক মিলন মেলা এই দেশ। উন্নত ও স্বচ্ছল জীবন-যাপনের তাগিদে বিশ্বব্যাপী মানুষ ছুটে চলছে আমেরিকার দিকে। আর এই পথচলা আরো সহজ করে দিয়েছে ডিভি লটারি প্রোগ্রাম।
ডিভি আবেদন ২০২৪ অর্থ বছর
ডাইভারসিটি ভিসা (ডিভি) লটারি ২০২৪ আবেদন আরম্ভ করতে যাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। এ আবেদন ০৫ অক্টোবর থেকে শুরু হয়ে আগামী ০৮ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে ।
বিদেশি নাগরিকদের ২০২৪ অর্থবছরে মোট ৫৫ হাজার গ্রিন কার্ড দেয়া হবে বলে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের বরাতে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম নিউজওয়্যার।
মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের সংবাদ মাধ্যম নিউজওয়্যারকে জানিয়েছে ২০২৪ অর্থবছরে মোট ৫৫ হাজার গ্রিন কার্ড দেয়া হবে বিদেশি নাগরিকদের। এ ডিভি লটারি’র আওতায় যে সকল দেশের নাগরিক আবেদন করতে পারবে না- বাংলাদেশ, কানাডা, চীন, ব্রাজিল, ডোমিনিকান রিপাবরিক, এল সালভাদর, হাইতি জ্যামাইকা, ভারত, হন্ডুরাস, দক্ষিণ কোরিয়া, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, মেক্সিকো, যুক্তরাজ্য (উত্তর আয়ারল্যান্ড ছাড়া) ভেনেজুয়েলা, নাইজেরিয়া ও ভিয়েতনাম।